সম্ভাব্য ব্যয় ৫ হাজার ২৫১ কোটি টাকা
দেশের টাকাতেই হচ্ছে চট্টগ্রাম কক্সবাজার মহাসড়ক চার লেন
জিটুজি বা যৌথভাবে জাইকা-সরকার নয় এবার দেশের টাকাতেই বাস্তবায়ন হচ্ছে বহুল প্রত্যাশীত চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক উন্নীতকরণ প্রকল্প। এ জন্য ব্যয় হচ্ছে পাঁচ হাজার ২৫১ কোটি টাকা। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে মহাসড়ক উন্নীতকরণ প্রকল্পের ডিপিপি জমা দেয়ার প্রত্যাশা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সওজ চট্টগ্রাম সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী জাহিদ হোসেন।
নতুনভাবে প্রণীত ডিপিপি মূলে এই মহাসড়কের মোট দৈর্ঘ্য হবে ১৩১ কিলোমিটার, যা কক্সবাজার থেকে আনোয়ারা ওয়াই-জংশন পর্যন্ত। চারলেনের এই সড়কের প্রশস্ত হবে ২৫.২ মিটার। এ ছাড়া সড়কে ছোট বড় ২৬টি সেতু এবং ১৬৪টি ছোট বড় কালভার্ট নির্মাণ করা হবে। এ সড়কে তিন মিটারের ব্রেক ডাউনও থাকছে। আর এ সড়কের কিছু জমিও অধিগ্রহণ করা হবে তবে কি পরিমাণ জমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে বা হবে তা এই মুহূর্তে জানা যায়নি।
এর আগে এই মহাসড়কটি জিটুজির মাধ্যমে বাস্তবায়নের জন্য জাপানের মারুবেনির সাথে এক প্রকার সবঝোতা হয়েই ছিল। সে পরিপ্রেক্ষিতে বুয়েটের বিশেষজ্ঞ দিয়ে মহাসড়ক উন্নীতকরণের জন্য সমীক্ষা প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছিল, যা গত বছরের ডিসেম্বরে পাবলিক পার্টনারশিপ (পিপিপি) অথরিটির কাছে দাখিল করা হয়। পরে সমীক্ষা প্রতিবেদনটিকে আরো উন্নতকরণের জন্য বলা হয়। সেই পরিপ্রেক্ষিতে বুয়েটের বিশেষজ্ঞরা পুনরায় যাচাই-বাছাই করে চলতি বছরের এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে সমীক্ষা প্রতিবেদনটি দাখিল করেছিলেন। পরে জিটুজির পরিবর্তে সরকার ও জাইকার যৌথ অর্থায়নে দীর্ঘদিনের প্রত্যাশিত এই প্রকল্পটি বাস্তবে আলোর মুখ দেখবে এমনটাই আশা করা হয়েছিল। ওই প্রকল্পে সড়কের দৈর্ঘ্য ছিল ১২৬ কিলোমিটার আর মহাসড়কের দুই পাশে সার্ভিস লেনসহ চারলেনে উন্নীতকরণে (২৫ কিলোমিটার বাইপাস ও ফাইওভার ছাড়া সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছিল ১৮ হাজার কোটি টাকা।
পরে সরকার দ্রুততম সময়ের মধ্যে মহাসড়ক উন্নীতকরণ প্রকল্পটি নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয় বলে নিশ্চিত করেছেন সওজের চট্টগ্রাম বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী জাহিদ হোসেন।
জানা গেছে, সরকারের বাস্তবায়নাধীন অগ্রাধিকার প্রকল্পের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক উন্নীতকরণ প্রকল্পে এশিয়ার সাথে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক যোগাযোগ (এশিয়ান কানেক্টিভিটি জোরদারকরণ) ভারত মিয়ানমার ও চীনের সাথে সরাসরি আধুনিক সড়ক যোগাযোগব্যবস্থা স্থাপনের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
বুয়েটের সমীক্ষায় জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবেলা, অভয়ারণ্য জীববৈচিত্র্য প্রাকৃতিক পরিবেশ প্রতিবেশের ওপরে বেশি গুরুত্বারোপ করা হয়েছিল। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এশিয়ান কানেক্টিভিটি গড়ে তোলার লক্ষ্যে দেশের প্রাকৃতিক পরিবেশ প্রতিবেশ জীববৈচিত্র্য অভয়ারণ্য ও প্রাণীকুলের অবাধ বিচরণ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেই গুরুত্বপূর্ণ দিকটি বিবেচনায় এনেই এই মহাসড়ক উন্নীতকরণ প্রকল্পের সমীক্ষা কার্যক্রম শেষ করে সমীক্ষা প্রতিবেদনটি করা হয়েছিল বলে নিশ্চিত করেছিলেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় বুয়েটের প্রফেসর ড. মুহাম্মদ হাদিউজ্জামান।
জানা গেছে, এর আগে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পরেই দেশের দ্বিতীয় ব্যস্ততম চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের ১৩২ কিলোমিটার সড়ক রূপান্তর করার কথা ছিল এক্সেস কন্ট্রোলড হাইওয়েতে (এক্সপ্রেসওয়ে) ফ্লাইওভার ও বাইপাসসহ।
জানা গেছে, এডিবির অর্থায়নে সর্বপ্রথম ২০১৩ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত সুইডিস কনসালটেন্ট নামে একটি বিদেশী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক চারলেনে উন্নীতকরণ কাজের সর্বপ্রথম সার্ভে কাজ সমাপ্ত করা হয়েছিল।
এরপরই ২০১৭ সালের ৬ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কক্সবাজারে মেরিন ড্রাইভ সড়ক উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ককে বর্তমান সময়ের সাথে সঙ্গতি রেখে উন্নীতকরণের ঘোষণা দেয়ার পরে অবশেষে বহুল প্রত্যাশিত চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক উন্নীতকরণ প্রকল্প আলোর মুখ দেখছে।
পাঠকের মতামত